বাংলাদেশের একমাত্র কৃত্রিম চ্যানেল - গাবখান চ্যানেল

Gabkhan channel
ছবিঃ গাবখান চ্যানেল

Gabkhan channel - মিশরের সুয়েজ খালের কথা তাে অনেকেই শুনছেন কিন্তু নিজ দেশেও যে 'বাংলার সুয়েজ খাল' হিসাবে পরিচিত একটি চ্যানেল আছে তা অনেকেই জানে না।

চ্যানেল বা প্রণালী হলো একটি খাল যা দুটি জলাধারকে সংযুক্ত করার জন্য স্থলভাগের উপর নির্মিত। এটি কৃত্রিমভাবে তৈরি করা হয়। অনেক সময় দেখা যায় এক নদী থেকে আরেক নদী বা এক সমুদ্র থেকে অন্য সমুদ্রে যেতে অনেক বেশি ঘুরতে হয়, ফলে পণ্য পরিবহনে খরচ বেশি হয়। তাই পথ কমিয়ে আনতে দুটি জলাধারের মধ্যে কৃত্রিম খাল খনন করা হয়।


বাংলার সুয়েজ খাল মিশরের সুয়েজ খালের মত না হলেও এর অবদান কিন্তু কোন অংশে কম নয়। বরং দেশের অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে এর গুরুত্ব অপরিসীম।বাংলাদেশের একমাত্র কৃত্রিম চ্যানেল হলাে 'গাবখান চ্যানেল' যাকে বাংলার 'সুয়েজ খাল' বলা হয়। ব্রিটিশ আমল থেকেই এ খালের অর্থনৈতিক প্রভাব ও গুরুত্ব অপরিসীম।


১৮০০ সালের শুরুর দিকে ব্রিটিশ শাসনামলে ঝালকাঠির সুগন্ধা, বিশখালী ও ধানসিঁড়ি নদীর মােহনা থেকে পিরােজপুরের সন্ধ্যা নদী পর্যন্ত এই চ্যানেলটি কৃত্তিমভাবে ভাবে খনন করা হয়। এর দৈর্ঘ্য প্রায় ১৮ কিলোমিটার। সংযুক্ত হয় ঢাকা, নারায়নগঞ্জ, চট্টগ্রাম, বরিশালের সাথে খুলনা, মংলা, মােরলগঞ্জ, হুলারহাট, যশােরের নওয়াপাড়া সহ গুরুত্বপূর্ণ নৌবন্দরগুলাে।


তখনকার সময়ের অবিভক্ত ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, আসাম ও মেঘালয়ের সাথে এ অঞ্চলের সাথে নৌ যােগাযােগ ও নৌ বাণিজ্যকে সহজতর করতে গাবখান চ্যানেলটি খনন করা হয়েছিল। এটি যখন খনন করা হয় তখন এই চ্যানেলটির প্রস্থ ছিলাে প্রায় ২৫০ মিটার, কিন্তু তা এখন কমে ৮০-৯০ মিটার হয়েছে।



Gabkhan channel দিয়ে ১০০০- ১৫০০ টনের জাহাজ চলাচল করতে পারে। চ্যানেলটি ব্যাবহার করে প্রতিদিন গড়ে ১২০- ১৩০ টি পন্যবাহি ও যাত্রীবাহি জাহাজ চলাচল করে। তাছাড়া প্রতি মাসে কমপক্ষে ৮০-৯০ টি তেলবাহি ও গ্যাসবাহি জাহাজ খুলনায় নিয়মিত আসা-যাওয়া করে।


বাংলাদেশের অভ্যন্তরীন ব্যবস্যা-বানিজ্যের অন্যতম অন্যতম প্রধান রুট হচ্ছে এই চ্যানেল|এই চ্যানেলটি ব্যবহার করে আমাদের দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বন্দর গুলাের সাথে সরাসরি যােগাযােগ সম্ভব হয়েছে।১৯৫০ সালে মােংলা বন্দর প্রতিষ্ঠার পর থেকে এটি আন্তর্জাতিক নৌপথ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।


ঢাকা-বরিশাল-খুলনা-মােরলগজ-হুলারহাট-মােংলা চট্টগ্রামের মধ্যে সরাসরি যোগাযোগ তৈরি হয়েছে এই
চ্যানেলের মাধ্যমে। গাবখান চ্যানেলটি যদি না থাকতো তাহলে দেশের অন্যতম প্রধান দুটি সমুদ্র বন্দরের মধ্যে পণ্য পরিবহনের জন্য নৌযান গুলােকে সুন্দরবন, বরগুনাসহ উপকূলীয় রুট হয়ে প্রায় ৩০০ কিলােমিটার পথ বেশি ঘুরতে হতাে। যার ফলশ্রুতিতে পণ্য পরিবহণের জন্য সময় এবং খরচ দুটোই বৃদ্ধি পেত, যা সরাসরি পণ্যের দামের উপর প্রভাব ফেলতাে।


তাছাড়া এই চ্যানেলটি থেকে সরকার প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আদায় করে থাকে। প্রতি টন ৮ টাকা হিসাবে ১০০০ টনের একটি জাহাজকে প্রতিবার পারাপারের জন্য কমপক্ষে ৮×১০০০ = ৮০০০ টাকা দিতে হয়। বাংলাদেশ থেকে ভারতে নৌপথে যােগাযােগের অন্যতম প্রধান রুট হচ্ছে এই চ্যানেলটি।

দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে ছােট্ট Gabkhan channel. কিন্তু নানা কারণে এই চ্যানেলটি অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। এটি এখন বিলুপ্তির মুখে। এই চ্যানেলটি না থাকলে 'মংলা সমুদ্র বন্দর' এক প্রকার অচল হয়ে পড়তাে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন