অপরাধীদের প্রতি নারীদের আকর্ষণের কারণ - হাইব্রিস্টোফিলিয়া

ক্রিমিনালদের প্রতি আকৃষ্ট হওয়া রোগ
Oporadhir proti akorshon

ভয়ংকর, নিষ্ঠুর অপরাধীদের প্রতি আকর্ষন এবং বিবর্তনীয় দৃষ্টিকোণ থেকে এর ব্যাখ্যা - হঠাৎ ঢাকায় ১৫টি দল ভয়ংকর মাদক এলএসডি (LSD) (লাইসার্জিক অ্যাসিড ডাইইথ্যালামাইড) বিক্রিতে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। এই মাদকটি বাংলাদেশে নতুন। সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী এই মাদক সেবনের পর নিজের গলা কেটে আত্মহত্যা করেছে। পুলিশ অতি দ্রুততার সাথে অভিযানে নামে এবং মাদক বিক্রি ও সেবনের অভিযােগে এ পর্যন্ত প্রায় আটজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করেছে।

কিন্তু এদের গ্রেপ্তারের ছবি ভাইরাল হয়ে যাওয়ার পর, দেখা গেলাে এক অবিশ্বাস্য ব্যাপার ঘটেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই এই ভয়ংকর মাদক কারবারিদের প্রতি সহানুভূতি দেখাচ্ছেন, লাভ রিয়েক্ট দিচ্ছেন। কুখ্যাত সন্ত্রাসী, হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলায় অংশগ্রহণকারী নিবরাস ইসলামের ছবিও সামাজিক যােগাযােগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়, এবং তখনও একই ঘটনা ঘটে।



অবাক করা বিষয় হলেও সত্যি অনেক মেয়েরাই এইসকল ভয়ংকর অপরাধীদের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছেন এবং অনেকক্ষেত্রেই তারা তাদের মনের অনুভূতিকে সরাসরি প্রকাশ করতেও দিধান্বিত হচ্ছেন না।


চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের ভাষায় এই ধরনের মানসিকতা দেখনোও একটি রােগ যাকে বলা হয় হাইব্রিস্টোফিলিয়া (Hybristophilia)। এ ধরনের রােগীরা অপরাধী বা ক্রিমিনাল দের প্রতি বেশি আকর্ষণ অনুভব করেন।


এ কারনে দেখা যায়, ইন্টারনেটে বিভিন্ন অপরাধীদের আনাগােনা যেসব ওয়েবসাইটে বেশি থাকে সেখানে ডেটিং, চ্যাটিং ইত্যাদির বিজ্ঞাপনও বেশি থাকে। কিন্তু অপরাধীদের প্রতি এমন ভালােবাসার আকর্ষণ অনুভব করার কারন বিবর্তনীয় দৃষ্টিকোণ থেকে ঠিক কী হতে পারে?



এর প্রশ্নের উত্তর লুকিয়ে আছে লক্ষ লক্ষ বছর পূর্বে গড়ে উঠা আমাদের জটিল সমাজ কাঠামােতে। মূলত সেই সময়কালে যারা হিংস্র, এগ্রেসিভ, বর্বর ছিল তাদের, সমাজে টিকে থাকার সম্ভাবনা বেশি ছিলাে। তার মুখ্য কারন ছিলাে খাদ্যের অপ্রতুলতা, বিভিন্ন গােষ্ঠীর মধ্যে দ্বন্দ্ব, যুদ্ধ, সংঘাত এবং বিভিন্নরকম প্রাকৃতিক দুর্যোগ।


স্বার্থপর জিনের উদ্দেশ্য যেহেতু নিজেকে কপি করা সেহেতু প্রাকৃতিক কারনেই সন্তান ধারণকারী নারীদেরকে তাদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার নিশ্চয়তা প্রদানে সর্বোচ্চ সজাগ থাকতে হয়। তাই সেই সময়ে তারা সঙ্গী হিসেবে এমন কাউকে নিশ্চয়ই বেছে নিতাে না যে পুরুষ দৈহিকভাবে দূর্বল হতাে। মাঝেমাঝে ইচ্ছের বিরুদ্ধে হলেও নারীরা বর্বর, হিংস্র পুরুষদের মেনে নিতাে কিংবা মেনে নিতে বাধ্য হতাে।


যদিও আবেগ, অনুভূতি, মানবিক পুরুষদেরও নারীরা সমানভাবে প্রাধান্য দিয়েছিলাে, কারন সন্তানের ভবিষ্যৎ নিরাপদভাবে বেড়ে উঠাকে, দীর্ঘদিন এই পুরুষরা কাছে থেকেই নিশ্চিত করতাে। লক্ষ বছর ধরে চলা এই বেছে নেওয়ার প্রবণতা, কালের বিবর্তনে একসময় ট্যাবু হয়ে যায় এবং এই তথ্য গুলাে ডিএনএ তে সংরক্ষিত হতে থাকে।


এর ব্যাপকতা চারিদিকে ছড়িয়ে পড়লে নারীরা তাদের সাথেই মিলিত হয়ে সন্তান জন্ম দিতে থাকে এবং সাচ্ছন্দ্যবােধ করতে থাকে, যারা তাদের রক্ষা করার ক্ষমতা রাখে এবং একইসাথে সন্তানদের খেয়ালও রাখে। আর এই প্রক্রিয়ার ফলে পুরুষদের মাঝেও ব্যাপক আকারে পরিবর্তন আসতে শুরু করে।


নারীদের আইকন হতে, পুরুষ দের মধ্যে প্রতিযোগিতা সৃষ্টি হয়। হিংস্রতা প্রদর্শন করে, যুদ্ধ পরিচালনা করে, সমাজে আধিপত্য বিস্তারের মাধ্যমে এগুলাে তারা চর্চা করতে থাকে, আর বিনিময়ে পায় নারী সঙ্গ। 

আদিম গােষ্ঠীগুলাের নিয়ন্ত্রণে ছিলাে শক্তিশালী আলফা পুরুষ লিডাররা, যাদের কথামত সবাই চলে এবং তাদের কথা মান্য করে।


দৈহিক দিক থেকে এভারেজ হলেও পরবর্তী প্রজন্মগুলােতে আলফা পুরুষরাই বেশি সুবিধা পায়। এর কারন তারা বুদ্ধিমত্তাকে ব্যাবহার করে গােষ্ঠীগুলােকে যেমন পরিচালনা করতে পারতাে তেমনি নিজেদের প্রয়ােজন অন্যদের চেয়ে ভালােভাবে মেটাতে পারতাে। ফলে বরাবরের মতাে তাদের এই বুদ্ধিমত্তাও নারীদের কাছে আকর্ষনের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিনত হয়। সব নারীরাই তাদেরকে জীবনসঙ্গী হিসেবে পেতে চায়। তাই একারণে পুরুষদের মধ্যেও আলফা পুরুষ হওয়ার, সেরা থেকে আরাে সেরা হওয়ার এক প্রতিযােগিতা লেগে যায়।


ক্রমেই তারা শারীরিক  হিংস্রতার চেয়ে তাদের বুদ্ধিমত্তা প্রদর্শন করে সমাজে একটা শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করতে থাকে। কালক্রমে দেখা যায় এই ইন্টেলেকচুয়ালিটি অর্জনের গ্রহণযােগ্যতা এতটাই বৃদ্ধি পায় যে নারীরা একসময় দৈহিক সক্ষমতার চেয়ে ইন্টেলেকচুয়ালদের বেশি প্রাধান্য দিতে থাকে। আর তাই পরবর্তী প্রজন্মগুলােতে ইন্টেলেকচুয়ালদের আধিপত্য বাড়তে থাকে। 


তারই ধারাবাহিকতায় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে আমরা অল্প সময়ে নিজেদের ব্যাপক উন্নত করেছি। অহিংস নীতি অনুসরণ করে সবার জন্য নিরাপদ সামাজিক কাঠামাে গড়ে তুলেছি। কিন্তু আমাদের বায়ােলজিক্যাল দেহ ঠিকই পরে আছে সেই লক্ষ বছরের আদিম স্মৃতিতে। তাই অপরাধীর প্রতি আকর্ষণ বিবর্তনীয় দিক দিয়ে সেপিয়েন্সে ব্যাপক গুরুত্ব বহন করে। একটু আশেপাশে লক্ষ করলেই দেখা যাবে এখনও অনেক নারী রয়েছেন যারা ব্যাকব্যান্সারদের পছন্দ করে। সুন্দর সুশ্রী মুখায়বের চেয়ে সামাজিক সক্ষমতার ইন্ডিকেটরগুলাে নারীদের বেশি মুগ্ধ করে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন