বিড়াল যখন কোনো উঁচু জায়গা থেকে পড়ে তখন সব সময় সে তার চার পায়ের ওপরই পড়ে। যদি মাথা নিচে থাকতো তাহলে তো সেটা চুরমার হয়ে যেত। চার পায়ের ওপর পড়াটাই বিড়ালের একটা বিশেষ কৌশল। এই কৌশলই বিড়ালকে বাঁচায়। কিন্তু একটা প্রশ্ন হলো বিড়াল তার শরীরটা কীভাবে সামলায়, যাতে করে সব সময় ঠিক চার পায়ের ওপরই পড়ে? সেটা জানার আগে আমরা বিড়ালের আরও কিছু সুবিধার কথা জেনে নেই।
![]() |
| ছবিঃ বিড়াল |
আমরা অনেকেই জানি বিড়ালের পায়ের নিচে খুব নরম কার্পেটের মতো পেশি আছে। ফলে সে আঘাতটা কম পায়। আবার এটাও ঠিক যে বিড়ালের ওজনের তুলনায় তার শরীরের বিস্তৃতি অনেক বেশি। সে প্রয়োজনে গা ফুলিয়ে শরীরের আয়তন আরো একটু বাড়িয়ে নিতে পারে। বিড়াল উঁচু জায়গা থেকে নিচে পড়ার সময় এভাবে শরীরের আয়তন বাড়িয়ে বাতাসের বাধা একটু বাড়িয়ে নেয়। ফলে মাটিতে পড়ার সময় আঘাত একটু কম লাগে। নিচে পড়ার সময় প্রথমে সে তার চার পা ছড়িয়ে দিয়ে বাতাসের বাধা আরও কমিয়ে দেয়। কিন্তু তার কিছুক্ষণ পরই বিড়াল তার চার পা শরীরের ভেতরের দিকে নিয়ে আসে। এভাবে না হয় বিড়াল কিছুটা ধাক্কা সামলালেও চার পায়ে মাটিতে পড়ে কীভাবে?
বিড়াল চার পায়ে মাটিতে পড়ে কীভাবে?
চার পায়ে মাটিতে পড়া হলো বিড়ালের প্রাগৈতিহাসিক যুগের কৌশল। বিড়াল যখন গাছে গাছে থাকত তখন খাবারের সন্ধানে এক গাছ থেকে আরেক গাছের ডালে লাফিয়ে যেতে হতো এবং প্রায়ই সে পা ফসকে মাটিতে পড়ে যেত। এ জন্য তার মধ্যে একধরনের সূক্ষ্ম অনুভূতি বা রিফ্লেকস অ্যাকশন কাজ করে। পড়ার সময় বিড়াল বুঝতে পারে কোনটা নিচ আর কোনটা ওপরের দিক। এই রিফ্লেকস অ্যাকশনই বিড়ালকে বাঁচায়।
বিড়াল মাটিতে পড়ার পূর্বমুহূর্তে তার চার পায়ের ওপর পড়ার ব্যবস্থা করতে পারার কারণেই টিকে গেছে। আজ অবশ্য বনে থাকলে সে গাছে গাছেই লাফিয়ে বেড়াত। এরপর একসময় বিড়াল লোকালয়ে এলো। মানুষের কাছাকাছি থাকা শুরু করলো। কিন্তু তারপরে সে তার সেই পুরোনো কৌশলটি ভুলে গেল না। বিড়াল এখনো যদি কোনো উঁচু জায়গা থেকে পড়ে যায়, তাহলে সে তার নিচ-ওপরের জ্ঞানটা কাজে লাগায়। তা ছাড়া বিড়ালের শরীরের অঙ্গগুলো খুব শিথিল বন্ধনে থাকে। বিড়ালের পাগুলো বেশ লম্বা, নরম পেশিবহুল এবং পা চারটি শরীরের নিচের দিকে ভেতর পর্যন্ত অনেকটা প্রসারিত থাকে। এগুলো অনেকটা ধকল সহনীয় ব্যবস্থা (শক অ্যাবজরবার) হিসেবে কাজ করে থাকে।
অন্যদিকে ওপর থেকে পড়ার সময় বিড়াল তার শরীর স্বয়ংক্রিয়ভাবে এদিক-ওদিক করে, যাতে ঠিক চার পায়ের ওপর যেন পড়ে, সে ব্যবস্থা করতে পারে। এটুকু করতে পারলেই বিড়ালের আর চিন্তা নেই। সে মাটিতে ঝুপ করে পড়েই গা ঝাড়া দিয়ে উঠে পড়ে। ভাবখানা এমন যেন কিছুই হয়নি। তবে খুব বেশি উঁচু জায়গা থেকে পড়ে গেলে বিড়াল ব্যথা পায়।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন